স্বাধীনতার পর মৎস্য ও মৎস্য পণ্য রপ্তানী দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিদেশী ক্রেতার অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৬ সালে জাতীয় মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প শুরু করে। এ প্রকল্পের পূর্বাঞ্চলীয় অফিস চট্টগ্রাম এ ১৯৭৭ সালে স্বল্পসংখ্যক জনবল ও নূন্যতম অবকাঠামো নিয়ে শুরু হয়। নিজস্ব পরীক্ষাগার না থাকায়, এ প্রকল্পের কার্যক্রম প্রক্রিয়াজাত কারখানার এবং অন-বোর্ড প্রক্রিয়াজাতকরণ মৎস্য নৌযান এর অবকাঠামো, পরিদর্শন ও অনুজীব পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সংগৃহীত নমুনা পতেঙ্গাস্থ বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প কর্পোরেশনের অধীন মেসার্স আমিন এজেন্সী এর পরীক্ষাগারে পরীক্ষণ করা হতো। প্রক্রিয়াজাত কারখানার স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ, সঠিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং পণ্যের বাহ্যিক গুণাগুণ ও অনুজীব পরীক্ষার ফলাফল দেখে স্বাস্থ্যকরত্ব সনদ প্রদান করা হতো।
পরবর্তীতে মান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আগ্রাবাদস্থ সরকারী কার্য্যভবন-২ এর ৭ম তলায় শুরু হয়। উক্ত ভবনে স্থান সংকুলান না হওয়ায় এবং অবকাঠামোগত ও কারিগরী জটিলতার কারণে সেখানে পরীক্ষাগার স্থাপন করা সম্ভব ছিল না। ফলে, ১৯৮৩ সালে মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণের সকল কার্যক্রম বর্তমান ঠিকানায় স্থানান্তরিত হয়। একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ মৎস্য ও মৎস্য পণ্য পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অত্র স্থাপনাকে সরকারী অর্থায়নে ও FAO এর কারিগরী সহযোগীতায় ১৯৮৩-৮৪ থেকে ১৯৮৮-৮৯ এর মধ্যে সংস্কার করে উপযোগী করা হয়। ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে রপ্তানীযোগ্য মৎস্য ও মৎস্য পণ্যের অনুজীব ও কতিপয় রাসায়নিক পরীক্ষা নিয়মিত ভাবে শুরু করা হয় এবং সে সময় হতে মৎস্য ও মৎস্য পণ্য (পরির্দশন ও মাননিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ও বিধিমালা মোতাবেক র্কাযক্রম পরিচালনা হয়ে আসছে।
১৯৯৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মান অনুযায়ী নতুন সুযোগ সুবিধা সংযুক্ত করে সরকারী অর্থায়নে পরীক্ষাগারকে পূনঃ সংস্কার করা হয়।
পরবর্তীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক ও কারিগরী সহযোগীতায় “Strengthening of Fish Inspection & Quality Control Services in Bangladesh” শীর্ষক প্রকল্পের (২০০৬-২০১০) মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে দ্বিতল পরীক্ষাগার ভবন নির্মান ও ইউনিডোর অর্থায়নে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয় এবং মাঠ পর্যায়ে ট্রেসিবিলিটি ও হ্যাসাপ সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। উক্ত প্রকল্পে ২য় ধাপে “Strengthening of Fish Inspection & Quality Control Services in Bangladesh.” শীর্ষক প্রকল্পের (২০১০-২০১৪) মাধ্যমে এক্রিডিটেশন এর লক্ষ্যে ল্যাবরেটরীতে কারিগরী সহযোগীতা প্রদান করা হয় এবং হ্যাসাপ গাইড লাইন প্রণয়ন করা হয়। যাহা মান সম্মত নিরাপদ মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
পরবর্তীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাহিদা মোতাবেক মৎস্য ও মৎস্য পণ্য (পরির্দশন ও মান নিয়ন্ত্রণ) বিভাগ থেকে মৎস্য ও মৎস্য পণ্য পরীক্ষাগারটি সম্পূর্ণ আলাদা করা হয়।
মিশন ও ভিশন
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ (এফআইকিউসি) এর অফিস ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ (এফআইকিউসি), চট্টগ্রাম গ্রাহকদের নিরাপদ ও মানসম্পন্ন মৎস্য ও মৎস্য পণ্য নিশ্চিত করার জন্য সরকারী নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। এই সরকারী নিয়ন্ত্রণ নিম্নলিখিত আইন, বিধি, নির্দেশিকা / ম্যানুয়াল ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।
কার্য পরিধি
নিরাপদ ও মানসম্পন্ন মৎস্য পণ্য নিশ্চিত করা এবং তার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যকরত্ব সনদ প্রদান করা।
গুণগতমানের নীতিমালা
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ (এফআইকিউসি), চট্টগ্রাম মৎস্য ও মৎস্য পণ্য ( পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ ) আইন, ২০২০, মৎস্য ও মৎস্য পণ্য ( পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ ) বিধিমালা, ১৯৯৭, সংশোধিত ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৭, এর আওতাভুক্ত বিধি অনুসারে ভাল পেশাদার অনুশীলন এবং এর কার্য সম্পাদনের মানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ (আরসিএ ) আন্তর্জাতিক প্রয়োজনীয়তা অনুসারে যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তার সম্পদ এবং দক্ষতা আপডেট করে এবং নিয়মিত ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতা উন্নত করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কার্যাবলী
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ (এফআইকিউসি), চট্টগ্রাম গ্রাহকদের নিরাপদ ও মানসম্পন্ন মৎস্য ও মৎস্য পণ্য নিশ্চিত করার জন্য সরকারী নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। এই সরকারী নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন আইন, বিধি, নির্দেশিকা এবং অফিসিয়াল নিয়ন্ত্রণ প্রোটোকলের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। প্রধান কাজগুলি হল:
আন্তর্জাতিক মানের সামঞ্জস্যতা
নিরাপদ ও মানসম্পন্ন মৎস্য ও মৎস্য পণ্যের সুরক্ষা ও মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাপনার বাংলাদেশ সরকারের সরকারী নিয়ন্ত্রন আইন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইনও নীতিমালা এবং গাইডলাইন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রবিধান / নির্দেশনা এবং ডব্লিউটিও এসপিএস চুক্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
পরিদর্শন সেবা
"ফিশ এবং ফিশারি প্রডাক্টস অফিশিয়াল কন্ট্রোলস প্রোটোকল"
সনদায়ন সেবা
এনআরসিপি (জাতীয় অবশিষ্টাংশ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা)
এটি চিংড়ি (বাগদা, গালদা ও হরিনা) চাষ এবং মাছ চাষের এলাকাতে বাস্তবায়ন করা হয় যেখানে থেকে চিংড়ি এবং মাছের উদ্ভব হয়
১. জলজ চাষের আঞ্চলিক ও মৌসুমী অঞ্চল
২. ওষুধ ও রাসায়নিক ব্যবহারের সম্ভাবনা
৩. অতীত অভিজ্ঞতা এবং ননকমপ্লাযেন্সের ঘটনাবলী
4. উচ্চ ঝুঁকিযুক্ত জড়িতপ্রজাতি ।
১. চাষকৃত চিংড়ি
২. চাষকৃত ফিন মাছ
৩. চিংড়ি ও ফিশ ফিড
পরীক্ষার প্যারামিটারসমূহঃ
উক্ত পরিষেবা সমূহ ভ্যালু চেইনের সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মৎস্য ও মৎস্য পণ্যের প্রত্যয়ন, অনুমোদন, লাইসেন্সিং, পরিদর্শন, নিরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আরসিএর অফিসিয়াল কন্ট্রোল এর পদ্ধতি স্বচ্ছ এবং অখণ্ডতার ধারণা এবং সুরক্ষা এবং গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ এর কার্যকারিতা পরিক্ষীত।
আনুষঙ্গিক মূল্যায়ন, যাচাইকরণ এবং কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে অফিসিয়াল গ্যারান্টি ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত সমস্ত পদ্ধতি এবং নিয়ন্ত্রণকারী সরঞ্জামগুলি ইইউ, ইউএস-এফডিএ এবং অন্যান্য উন্নত দেশের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
রেসিডু মনিটরিং প্রোগ্রাম গ্রহণযোগ্য মাত্রার পদার্থের জন্য দূষক এবং এমআরএল সহ কৃষকের পণ্যের অবশিষ্টাংশ দূষণের উৎস নির্ধারণের সহনশীলতার সীমা মেনে চলাকে মূল্যায়ন করে। এটিও একটি আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর বৈধ প্রোগ্রাম।